লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনা: মৃত্যুর সংখ্যায় গরমিল
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৬৬৬ সালে, লন্ডন একটি ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় যা চার দিন ধরে লন্ডনকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় এবং প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস করে। এই বিপর্যয়কর ঘটনায় মৃত্যুর যে সংখ্যাটি রেকর্ড করা হয়েছিল তা অবাক করার মতো কম: মাত্র ছয়টি যাচাই করা মৃত্যু। যাইহোক, এই সংখ্যাটি ইতিহাসবিদ এবং গবেষকদের দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, যারা যুক্তি দিয়েছেন যে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সম্ভবত আরও অনেক বেশি ছিল।
মৃতের সংখ্যা নিয়ে গরমিল
অফিসিয়াল মৃত্যুর সংখ্যা এবং অনুমানিক মৃতের সংখ্যার মধ্যে এই গরমিল কয়েকটি কারণে ঘটেছে। প্রথমত, আগুনের তীব্র তাপ এবং শিখা অনেক দেহকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে এবং খুব অল্প প্রমান রেখে গেছে। দ্বিতীয়ত, নিহত ব্যক্তিরা প্রধানত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর, যাদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই অফিসিয়ালি রেকর্ড করা হয়নি। ১৬৬৬ সালে ফরেনসিক প্রযুক্তি খুবই প্রাথমিক অবস্থায় ছিল, যা নিহত ব্যক্তিদের দেহাবশেষ সনাক্ত করতে এবং গণনা করতে অসুবিধা তৈরি করেছিল।
স্মৃতিস্তম্ভ
লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনার স্মরণে শহরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্রুপাত্মকভাবে, এই স্মৃতিস্তম্ভটি আরও কিছু মৃত্যুর স্থান হয়ে উঠেছে। ছয়জন ব্যক্তি এই স্মৃতিস্তম্ভটি থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে, এবং দুজন দুর্ঘটনাবশত পড়ে মারা গেছে। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান একটি জনপ্রিয় দাবির জন্ম দিয়েছে যে অগ্নি দুর্ঘটনায় যে সংখ্যক লোকের মৃত্যু হয়েছিল তার চেয়ে বেশি সংখ্যক লোক এই স্মৃতিস্তম্ভ থেকে পড়ে মারা গেছে।
নিল হ্যানসনের গবেষণা
“লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনা: সেই প্রলয়ঙ্কারী বছরে, ১৬৬৬” বইয়ের লেখক নিল হ্যানসন, আগুনটি এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তিনি অনুমান করেছেন যে “অনেক শতাধিক এবং সম্ভবত কয়েক হাজার” লোক সম্ভবত আগুনে নিহত হয়েছে। হ্যানসনের গবেষণাটি এই সত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি যে আগুন শহরের এত বড় একটি অংশকে ধ্বংস করে দিয়েছে যে কেবল ছয়জন লোকের মৃত্যু হয়েছে, এটি অত্যন্ত অসম্ভাব্য।
অলিখিত মৃত্যু
লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা অনেকাংশে কম রিপোর্ট করা হয়েছিল যা সেই সময়ের বিশৃঙ্খলা এবং ভয়াবহ অবস্থার কারণে হতে পারে। শহর যখন আগুনে জ্বলছিল, তখন কর্মকর্তাদের নিহত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের সনাক্ত করতে অসুবিধা হয়েছিল। তাছাড়াও, সেই যুগের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের অর্থ ছিল যে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মৃত্যু প্রায়ই অবহেলা করা হত এবং সেগুলো ডকুমেন্ট করা হত না।
ঐতিহ্যবাহী বর্ণনাকে চ্যালেঞ্জ করা
ঐতিহাসিক এবং গবেষকরা লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যার ঐতিহ্যবাহী হিসাবকে চ্যালেঞ্জ করেছেন যারা যুক্তি দিয়েছেন যে এটি একটি উল্লেখযোগ্যভাবে কম অনুমান। অফিসিয়াল সংখ্যা এবং অনুমানিক মৃতের সংখ্যার মধ্যে এই গরমিল ঐতিহাসিক ঘটনার মানবিক ক্ষতির সঠিক মূল্যায়ন করার চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরে, বিশেষত যখন রেকর্ডগুলি অসম্পূর্ণ বা পক্ষপাতদুষ্ট থাকে।
উপসংহার
যদিও লন্ডনের মহা অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা অনিশ্চিত রয়ে গেছে, তবুও এটা স্পষ্ট যে মৃতের সংখ্যা ছয়টির ঐতিহ্যবাহী সংখ্যাটি অপর্যাপ্ত। প্রমাণগুলি পরামর্শ দেয় যে আগুনে সম্ভবত শতাধিক বা হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে, এটি একটি মর্মান্তিক ক্ষতি যা ঐতিহাসিক পক্ষপাত এবং সীমাবদ্ধতার দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে গেছে।