ওয়াশিংটন ডিসিকে বিদায় জানালো দানবীয় পান্ডাগুলো
বিদায়ের বিস্তারিত
আজ ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা এবং সংরক্ষণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউট-এর (NZCBI) জন্য মিষ্টি ও তিতার মিশ্র একটা দিন কারণ তিনটি প্রিয় দানবীয় পান্ডা, মেই শিয়াং, তিয়ান তিয়ান এবং শিয়াও কিউ জি, চীনে ফিরে যাওয়ার যাত্রা শুরু করল। তাদের চলে যাওয়াটা প্রত্যাশার চেয়ে অনেকটাই আগে হয়ে গেল, মাত্র এক মাসেরও কম সময় আগে NZCBI এর চীন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অ্যাসোসিয়েশন-এর (CWCA) সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার।
এই তিনটি পান্ডা ওয়াশিংটন ডিসিকে একটা অনন্য স্টাইলে বিদায় জানাবে। তারা একটা “ফেড-এক্স পান্ডা এক্সপ্রেস” নামের কাস্টমাইজ করা কার্গো প্লেনে চড়ে যাবে। চীনের চেংদুতে পৌঁছতে প্রায় ১৯ ঘন্টা সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে আর মাঝে অ্যাঙ্করেজ, আলাস্কা-তে একবার রিফুয়েল করতে হবে।
একটি বিলাসবহুল অবসর আর প্রজনন সুযোগ
চীনে পৌঁছানোর পর, ২৫ বছরের মেই শিয়াং এবং ২৬ বছরের তিয়ান তিয়ান একটি “বিলাসবহুল অবসরে” চলে যাবে আর তাদের ২ বছরের ছেলে, শিয়াও কিউ জি তার জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পাবে। শিয়াও কিউ জির নামের অর্থ “ছোট্ট অলৌকিক কাজ,” যেটা আসলে ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় সে যে আনন্দ এনেছে, সেটারই একটা সুন্দর প্রতিফলন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই পান্ডাগুলোর বিদায় ওয়াশিংটন ডিসির ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সূচনা করে কারণ এটাই প্রথমবারের মতো ২৩ বছর পরে রাষ্ট্রের রাজধানীতে এই প্রিয় প্রাণীগুলো আর থাকবে না। ১৯৭২ সালে লিং-লিং এবং হিসিং-হিসিং-এর আগমনের পর থেকেই এই পান্ডাগুলো ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় একটা প্রধান আকর্ষণ ছিল।
পান্ডা কূটনীতি
দানবীয় পান্ডাগুলো চীনের কূটনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০০ সালে ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় মেই শিয়াং এবং তিয়ান তিয়ানকে পাঠানোটা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সদিচ্ছার একটা ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণে পান্ডা কূটনৈতিক প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রজনন কর্মসূচি এবং সংরক্ষণ
ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় জন্মানো পান্ডাগুলো তাদের প্রজাতির বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা একটা প্রজনন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। মেই শিয়াং এবং তিয়ান তিয়ানের জন্মানো বাচ্চাগুলোকে প্রায় ৪ বছর বয়সে এই কর্মসূচিতে অবদান রাখার জন্য চীনে পাঠানো হয়েছে।
ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় পান্ডাদের ভবিষ্যৎ
পান্ডারা কি নিকট ভবিষ্যতে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে আসবে সেটা এখনও অনিশ্চিত। NZCBI কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কতার সাথে আশাবাদী, যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি পান্ডাদের আবাসস্থলের জন্য ২.৫ মিলিয়ন ডলারের সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পান্ডা কূটনৈতিক কর্মসূচি আবার শুরু হওয়াটা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ওপর।
যাত্রার বিস্তারিত বিবরণ
দানবীয় পান্ডাগুলোর দীর্ঘ যাত্রার সময় তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য ফেড-এক্স পান্ডা এক্সপ্রেস কার্গো প্লেনটা বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রতিটি পান্ডাকেই স্টিল এবং প্লেক্সিগ্লাসের তৈরি তাদের নিজস্ব শিপিং কন্টেইনারে রাখা হবে, যেটা তাদের একটা আরামদায়ক এবং নিরাপদ পরিবেশ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পরিবহণের সময় দুইজন দায়িত্বরত এবং একজন ভেটেরিনারি পান্ডাদের সাথে থাকবে, যাত্রাটা জুড়ে তাদের ভালো থাকা নিশ্চিত করতে। ভালুকগুলো যাতে ভালো মেজাজে থাকে সেজন্য দলটা ২00 পাউন্ডের বেশি বাঁশ, পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট এবং পছন্দের স্ন্যাক্স যেমন, নাশপাতি এবং বাটারনট স্কোয়াস নিয়ে যাচ্ছে।
অন্তরের বিদায়
যখন পান্ডারা বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখন ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা আর ওয়াশিংটন ডিসির মানুষজন তাদের অন্তরের বিদায় জানাচ্ছে। এই প্রিয় প্রাণীগুলো অনগিন্তি দর্শকের কাছে আনন্দ আর অবাক করা জিনিস নিয়ে এসেছে এবং তাদের অনুপস্থিতি অনেকটা অনুভূত হবে। কিন্তু আশা করা যায়, ভবিষ্যতে পান্ডারা আবারও রাষ্ট্রের রাজধানীকে সাজাবে।