ইথিওপিয়াতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবঃ আক্রমণধর্মী মশা প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত
আক্রমনকারী মশা আফ্রিকায় শহুরে ম্যালেরিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ
ইথিওপিয়ার শহর ডিরে দাওয়াতে ম্যালেরিয়ার একটি প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে আক্রমণধর্মী মশা প্রজাতি অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সির সাথে। এশিয়ার আদিবাসী এই প্রজাতি তার নিজের অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর একটি প্রধান কারণ। আর এটি এখন আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।
শহুরে ম্যালেরিয়া: একটি নতুন হুমকি
প্রথাগতভাবে আফ্রিকাতে ম্যালেরিয়া গ্রামীণ অঞ্চল এবং বর্ষাকালে সীমাবদ্ধ ছিল। যাইহোক, অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সি শুষ্ক মৌসুমেও টিকে থাকতে পারে এবং জনবহুল শহুরে এলাকায় বাঁচতে পারে। এটি শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণার ফলাফল
গবেষকরা ডিরে দাওয়ায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ট্র্যাক করেছেন এবং তাদের বাড়ির আশেপাশে মশা খুঁজেছেন। তারা দেখেছেন যে ধরা পড়া প্রাপ্তবয়স্ক মশার 97% ছিল অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সি। এবং ধরা পড়া অ-আক্রমণধর্মী মশার কোনটিই ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবী বহন করছিল না।
আক্রমণধর্মী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ
অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সি আফ্রিকায় ব্যবহৃত অনেক সাধারণ কীটনাশকের প্রতি প্রতিরোধী এবং বিছানার মশারি এবং ঘরের ভিতরে স্প্রে করা হলে তা এড়িয়ে যেতে পারে। এটি রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে।
ম্যালেরিয়া সংক্রমণের উপর প্রভাব
শহুরে এলাকায় অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সির উপস্থিতি ম্যালেরিয়া সংক্রমণের হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষকরা দেখেছেন যে যাদের বাড়ির কাছে পানির উৎস আছে তাদের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা 3.4 গুণ বেশি।
নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশল
এই আক্রমণধর্মী প্রজাতির মুখোমুখি হয়ে ম্যালেরিয়া মোকাবেলার জন্য কিছু উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োজন। একটি কৌশল হতে পারে গবাদিপশুতে কীটনাশক ব্যবহার করা, কারণ অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সি গবাদিপশু খায়। অপ্রয়োজনীয় পানির সঞ্চয়ের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখা এবং সরিয়ে ফেলাও মশার প্রজননস্থল কমানোতে সাহায্য করতে পারে।
ম্যালেরিয়া টিকা: একটি সম্ভাব্য সমাধান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) উচ্চ সংক্রমণ হারযুক্ত দেশগুলোতে শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকার সুপারিশ করেছে। যদিও এই টিকার প্রভাব এখনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তবুও এটি ম্যালেরিয়া সংক্রমণ কমাতে সম্ভাব্য ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে যদি অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সি আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। শহুরে এলাকায় ম্যালেরিয়া সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে রোগাক্রান্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে, বিশেষত পাঁচ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
উপসংহার
ইথিওপিয়াতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব আক্রমণধর্মী মশা প্রজাতি দ্বারা সৃষ্ট হুমকিকে তুলে ধরে। অ্যানোফেলিস স্টিফেন্সির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ এবং আফ্রিকায় শহুরে ম্যালেরিয়ার ধ্বংসাত্মক পরিণতি রোধ করতে উদ্ভাবনী কৌশলের দ্রুত প্রয়োজন।