সৌদি আরব ৩৫ বছর পর সিনেমা হলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল
পটভূমি
৩৫ বছর পর প্রথমবারের মতো সৌদি আরব তাদের নাগরিকদের সিনেমা হলে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা উপভোগ করার অনুমতি দেবে। এই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপটি দেশের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য হলো রাজতন্ত্রকে আধুনিকীকরণ করা এবং তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া
২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল, সৌদি আরব ঘোষণা করেছে যে তারা সিনেমা হলের উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা শেষ করবে। সরকার ইতিমধ্যে সিনেমা লাইসেন্স জারি করা শুরু করেছে এবং প্রথম সিনেমা হলগুলি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনেমা হল পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের জন্য একটি বড় সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, যা দীর্ঘদিন ধরে তার রক্ষণশীল ধর্মীয় আইনগুলির জন্য পরিচিত ছিল। যাইহোক, এই পদক্ষেপটিকে উদারীকরণ এবং আধুনিকীকরণের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়।
সেন্সরশিপ এবং বিধিনিষেধ
যদিও সৌদি আরবে এখন সিনেমা হলগুলি আইনি, সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলির বিষয়বস্তুর উপর কিছু বিধিনিষেধ থাকবে। দেশের মিডিয়া নীতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে চলচ্চিত্রগুলি সেন্সর করা হবে।
কর্মকর্তাদের মতে, যৌনতা, নগ্নতা বা অন্য যেকোনো বিষয়বস্তু যা ইসলামী আইন লঙ্ঘন করে সেগুলি সম্বলিত চলচ্চিত্রগুলি অনুমোদন করা হবে না। যাইহোক, সহিংসতা এবং রক্তপাত সহ্য করা যেতে পারে।
শিল্পের আগ্রহ
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণাটি আন্তর্জাতিক সিনেমা হল শৃঙ্খলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আগ্রহ জাগিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সিনেমা হল শৃঙ্খল এএমসি ইতিমধ্যেই সারা দেশে সিনেমা হল নির্মাণ এবং পরিচালনা করার জন্য সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। দুবাইভিত্তিক সিনেমা শৃঙ্খল ভিওএক্সও সৌদি আরবে প্রসারিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
সিনেমা হলগুলি পুনরায় খোলার ফলে সৌদি আরবের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার আশা করা হচ্ছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী অনুমান করেছেন যে দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০০টি সিনেমা হল এবং ২০০০টি স্ক্রিন সমর্থন করবে। এটি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং বিনোদন শিল্পকে উন্নীত করবে।
সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
সিনেমা হলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া সৌদি আরবের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মুহূর্ত। এটি একটি আরও উদার এবং উন্মুক্ত সমাজের দিকে একটি পরিবর্তনকে উপস্থাপন করে।
দশক ধরে, সৌদিদের সিনেমা দেখার জন্য প্রতিবেশী দেশে ভ্রমণ করতে হয়েছে অথবা স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলির উপর নির্ভর করতে হয়েছে। এখন, তাদের নিজেদের দেশেই সিনেমার জাদু উপভোগ করার সুযোগ থাকবে।
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা
যদিও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি স্বাগত পরিবর্তন, এটি লক্ষণীয় যে সৌদি আরব একটি রক্ষণশীল সমাজ রয়ে গেছে। সরকার জোর দিয়েছে যে চলচ্চিত্রগুলি সেন্সর করা হবে এবং এটি সম্ভব যে কিছু চলচ্চিত্র সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে।
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে এই ভারসাম্য রক্ষা করা সৌদি আরবের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে কারণ তারা তাদের সাংস্কৃতিক সংস্কারগুলির সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
নারীর অধিকার এবং অন্যান্য সংস্কার
সিনেমা হলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া সৌদি আরবে সাম্প্রতিক কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংস্কারের মধ্যে একটি মাত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মহিলাদের গাড়ি চালানোর এবং ক্রীড়া স্টেডিয়ামে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলি মূলত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যিনি গত দুই বছরে ক্ষমতা সুসংহত করেছেন। অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে তিনি জাতির বেশিরভাগ নীতি তৈরি করছেন।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ভবিষ্যতে সৌদি আরবকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন তা এখনও দেখার বিষয়। যাইহোক, সিনেমা হলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে দেশটি একটি আরও উদার এবং উন্মুক্ত সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।