জাহি হাওয়াসের পতন: মিশরীয় প্রত্নতত্ত্বে এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব
প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ
জাহি হাওয়াস, বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ যিনি প্রায় এক দশক ধরে মিশরের প্রত্নতত্ত্বের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাকে ২০১১ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ করে প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। দেশটির মিশরীয় বিপ্লবের পরে দেশের মন্ত্রিসভার একটি ব্যাপক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অভিযোগ ও প্রতিবাদ
হাওয়াসের অপসারণ মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ব্যাপকভাবে সম্মানিত হলেও, মিশরের মধ্যে তিনি ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হন। তরুণ প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং প্রতিবাদকারীরা তাকে দুর্নীতি, নিম্নমানের বিজ্ঞান এবং পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
নোরা শালাবি, একজন তরুণ মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ যিনি বিপ্লবে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন, হাওয়াসের বিরুদ্ধে মনোভাবের সারসংক্ষেপ করে বলেন, “তিনি প্রত্নতত্ত্বের মোবারক ছিলেন।”
অস্থায়ী পুনর্বহাল
অপসারণের পরে বেশ কয়েক দিন হাওয়াসের অবস্থা অনিশ্চিত ছিল। তার উত্তরসূরি হিসেবে আব্দেল ফাত্তাহ এল-বান্নাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা এল-বান্নার প্রত্নতাত্ত্বিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
হাওয়াস ইমেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে, তবে স্পষ্ট নয় যে কতদিনের জন্য।
প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য পদত্যাগ
প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়, যা মোবারক তার সরকারকে উদ্ধার করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে তৈরি করেছিলেন, মন্ত্রিসভা পর্যায়ের সংস্থা থেকে পদত্যাগ করতে পারে। এই সম্ভাবনায় মিশরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদেশী প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বার্মিংহামের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মিশরতত্ত্ববিদ সারা পারকাক, সম্ভাব্য পদত্যাগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
“আমি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন,” পারকাক বলেন। “এবং এই স্মৃতিসৌধগুলি মিশরীয় অর্থনীতির জীবনরেখা।”
হাওয়াসের বিতর্কিত কর্মজীবন
১৯৮০-এর দশকে পেনসিল্ভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্নতত্ত্বে পিএইচডি অর্জনের পরে হাওয়াস জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি গিজা মালভূমিতে প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক পরিদর্শক হন, যেখানে প্রতীকী পিরামিডগুলি রয়েছে। ২০০২ সালে, তাকে প্রাচীন নিদর্শন সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কাউন্সিলের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
তার দায়িত্ব পালনের সময়, হাওয়াস বিদেশী জাদুঘর থেকে প্রতীকী প্রত্নতত্ত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন, যার মধ্যে ব্রিটিশ যাদুঘর থেকে রোসেটা স্টোন এবং বার্লিনের নুয়েস জাদুঘর থেকে নেফারতিতির মূর্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বিদেশী প্রদর্শনীগুলির জন্য মিশরীয় শিল্পকলার অ্যাক্সেস সহজ করে তোলেন, যা মিশরীয় সরকারকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব এনে দেয়।
যাইহোক, টেলিভিশন উপস্থিতিতে, বিশেষত রিয়েলিটি শো “চেজিং মমিস” -এ শিল্পকলার প্রতি তাঁর উদাসীন আচরণের জন্যও হাওয়াস সমালোচনার সম্মুখীন হন। মিশরীয়রা তাঁর বই সফর, বক্তৃতা এবং টেলিভিশন উপস্থিতি সংক্রান্ত তাঁর আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পর্যটন প্রচার
বিতর্ক সত্ত্বেও, হাওয়াস আন্তর্জাতিকভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবেই থেকে গেছেন। বিদেশী পর্যটকদের ফিরিয়ে আনতে ২০১১ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করে মিশরে পর্যটনকে উন্নীত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
হাওয়াসের উত্তরাধিকার এবং মিশরীয় প্রত্নতত্ত্বের ভবিষ্যত
জাহি হাওয়াসকে সরিয়ে দেওয়া মিশরীয় প্রত্নতত্ত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। উত্তরাধিকারগুলি এখনও জটিল, যা অর্জন এবং বিতর্ক দ্বারা চিহ্নিত।
দেশটি যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হচ্ছে তখন মিশরীয় প্রত্নতত্ত্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য পদত্যাগ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য চলমান প্রয়োজনীয়তা মিশরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।