জিহ্বা: তাদের বৈচিত্র্যময় কার্যাবলী এবং খাপ খাওয়ানোর কৌশল
ভূমিকা
জিহ্বা হল একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় অঙ্গ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের স্বাদ গ্রহণ, কথা বলা এবং গিলে ফেলার ক্ষমতা দেয়, কিন্তু এর কার্যক্ষমতা এই মৌলিক কাজগুলোর অনেক বাইরে বিস্তৃত। প্রাণী জগতে, জিহ্বা অসাধারণ বৈচিত্র্যের খাপ খাওয়ানোর কৌশল প্রদর্শন করে যা প্রাণীদের তাদের নিজ নিজ পরিবেশে টিকে থাকতে এবং উন্নতি করতে সক্ষম করে।
জিহ্বার প্রকারভেদ
- অ্যালিগেটর স্ন্যাপিং টার্টল (কচ্ছপ): এই কচ্ছপের জিহ্বার শেষ প্রান্তে কেঁচোর মত একটি অ্যাপেনডেজ আছে। এটি নিশ্চলভাবে পানিতে থাকে, মুখ খোলা থাকে, এর জিহ্বা দিয়ে মাছকে প্রলুব্ধ করে এবং তারপর দ্রুত তার ফাঁদটি বন্ধ করে দেয়।
- গিরগিটি: গিরগিটির অত্যন্ত দ্রুত জিহ্বা থাকে যেগুলো তারা শিকার ধরার জন্য তাদের মুখ থেকে বের করে। জীববিজ্ঞানীরা তাদের জিহ্বার গতি প্রায় ১৩.৪ মাইল প্রতি ঘন্টা হিসেবে গণনা করেছেন।
- স্যালামান্ডার: স্যালামান্ডারের জিহ্বা এমন কিছু যা দ্রুত গতির পোকামাকড় ধরার জন্য বিস্ফোরণমূলক শক্তির সাথে বেরিয়ে আসতে পারে। তাদের জিহ্বা প্রতি কিলোগ্রাম পেশীর জন্য ১৮,০০০ ওয়াটের একটি চিত্তাকর্ষক শক্তি উৎপন্ন করে।
- সাপ: একটি সাপের কাঁটা জিহ্বা স্বাদ এবং গন্ধ উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়। এর আকৃতি দিকনির্দেশনা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে, সাপটিকে শিকার খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
- জিরাফ: জিরাফের দীর্ঘ, নীল-কালো রঙের জিহ্বা থাকে যা তারা একেশিয়া গাছের কাঁটার চারপাশ দিয়ে পেঁচিয়ে পাতা তুলতে ব্যবহার করে। জিহ্বার রঙ সম্ভবত একে সানবার্ন থেকে রক্ষা করে।
- হামিংবার্ড: হামিংবার্ড তাদের জিহ্বা দিয়ে মধু পান করে, যা একসময় খড়ের মত কাজ করার জন্য ভাবা হত। যাইহোক, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে তাদের জিহ্বা বরং কাঁটাচামচের মত, যার সাহায্যে তারা তরল ধরে রাখে।
- বিড়াল: বিড়াল তাদের জিহ্বা পেছন দিকে মুড়িয়ে এবং প্রতিটি চুমুকে সামান্য পরিমাণ দুধ বা পানি তুলতে হাইড্রোডাইনামিক্স ব্যবহার করে তরল ল্যাপ করে। তাদের বালির কাগজের মত জিহ্বা রুক্ষ্ম লোমও তাদের পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
- নীল-জিহ্ব完া স্কিঙ্ক (গিরগিটি জাতীয় প্রাণী): এই টিকটিকি তার নীল জিহ্বা ব্যবহার করে শিকারিদের ভয় দেখায় এবং তাদের দূরে সরিয়ে দেয়।
- দৈত্যাকার আন্ট-ইটার: দৈত্যাকার আন্ট-ইটারের জিহ্বা প্রায় দুই ফুট লম্বা হতে পারে এবং তাদের বক্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। তারা শিকার করা পিঁপড়েদের সংগ্রহ করার জন্য তাদের জিহ্বাকে আঠালো লালা দিয়ে ঢেকে রাখে।
- জিহ্বা-খাওয়া উকুন: এই ক্ষুদ্র পরজীবী মাছের ফুলের মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং মাছের জিহ্বায় নিজেকে আটকে দেয়। এটি জিহ্বার রক্ত খায়, যার ফলে এটি শুকিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মাছের মুখে এটি প্রতিস্থাপন করে।
জিহ্বার কার্যাবলী
- স্বাদ: জিহ্বায় স্বাদকুঁড়ি থাকে যা আমাদের বিভিন্ন স্বাদ উপলব্ধি করতে সক্ষম করে।
- কথা বলা: জিহ্বা কথার শব্দ উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গিলে ফেলা: জিহ্বা খাদ্যকে মুখ থেকে এসোফেগাসে সরাতে সাহায্য করে।
- রুক্ষ্ম লোমের পরিচর্যা: কিছু প্রাণী, যেমন বিড়াল, তাদের জিহ্বা তাদের রুক্ষ্ম লোম পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করে।
- প্রতিরক্ষা: কিছু প্রাণী, যেমন নীল-জিহ্ব完া স্কিঙ্ক, শিকারীদের ভয় দেখানোর জন্য প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে তাদের জিহ্বা ব্যবহার করে।
- ধরা: গিরগিটি এবং আন্ট-ইটার তাদের জিহ্বা ব্যবহার করে শিকার ধরে।
- ইন্দ্রিয়গত উপলব্ধি: সাপ তাদের শিকারের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কাঁটা জিহ্বা ব্যবহার করে।
উপসংহার
জিহ্বা অত্যন্ত বহুমুখী অঙ্গ যা বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এলিগেটর স্ন্যাপিং টার্টলের কেঁচোর মত লোভনীয় জিহ্বা থেকে গিরগিটির বিদ্যুৎ-গতির জিহ্বা পর্যন্ত, এই অত্যন্ত আকর্ষণীয় উপাঙ্গ বিশ্বজুড়ে প্রাণীদের টিকে থাকা এবং আচরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।