উপগ্রহের গুলতি: কিভাবে OSIRIS-REx পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে তার মিশনকে গতিশীল করেছে
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ: একটি আকাশীয় ত্বরক
মহাকাশের বিস্তীর্ণতায়, মহাকাশযান প্রায়ই মাধ্যাকর্ষণ সহায়তা ব্যবহার করে, যা গুলতি নামে পরিচিত, জ্বালানি সংরক্ষণ ও আরও দক্ষভাবে তাদের গমনপথে চলাচলের জন্য। গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ টান ব্যবহার করে, উপগ্রহ তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে ও ত্বরণ লাভ করতে পারে, তাদের নিজস্ব প্রপেল্যান্ট ব্যবহার ছাড়াই।
OSIRIS-REx: জীবনের উৎস নিয়ে গবেষণার একটি মিশন
OSIRIS-REx মহাকাশযান, যা ২০২৬ সালে NASA দ্বারা চালু করা হয়েছে, বেনু নামের গ্রহাণু নিয়ে গবেষণা চালানোর জন্য এক বিপ্লবকরী মিশনে রওনা দেয়। এই ১৬০০ ফুট চওড়া আকাশীয় বস্তু পৃথিবীতে জীবনের উৎস সম্পর্কে সূত্র ধারণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়। বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিক ভাবে ব্যাখ্যা দেন যে কার্বনেসিয়াস কন্ড্রাইট, সৌরজগতের সৃষ্টির সময় গঠিত উল্কাপিণ্ড, আমাদের গ্রহে পানি ও জৈব সংযুক্তি নিয়ে আসে, এমনকি সম্ভাব্যভাবে তা শুরুর দিকের জীবনকে বিস্তার লাভে সাহায্য করে।
বেনু: ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি লক্ষ্য
বেনুর কক্ষপথ, যা পৃথিবীর কক্ষপথের অনুরূপ, তা OSIRIS-REx এর জন্য একটি আদর্শ লক্ষ্য বানিয়ে তোলে। কিন্তু, গ্রহাণুতে পৌঁছানোর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন। সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে, বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণের গুলতি হিসেবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন।
গুলতির কৌশল: সঠিকভাবে বাস্তবায়ন
শুক্রবার, OSIRIS-REx পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে, গতিবেগে উল্লেখযোগ্যভাবে গতি বাড়ায়। এই কৌশলে গ্রহাণুর দিকে ঘন্টায় প্রায় ১৯০০০ মাইল বেগে উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের সদ্ব্যবহার করে। এই গুলতি শুধুমাত্র OSIRIS-RExকে সামনের দিকে ত্বরান্বিতই করে না, একইসাথে এর পথে ৬ ডিগ্রি প্রায় কাত করে দেয় এবং গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ করার সঠিক পথে নিয়ে যায়।
মাধ্যাকর্ষণ সহায়তা: মহাকাশ অভিযানের জন্য একটি সাধারণ উপকরণ
মহাকাশ অভিযানে মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ একটি সাধারণ কৌশল। উদাহরণ স্বরূপ, Voyager উপগ্রহগুলো বহিঃস্থ গ্রহগুলোর একটি বিরল সংলগ্নতার সদ্ব্যবহার করে চারটি গ্যাসীয় দানব থেকেও গতিবেগ অর্জন করে। আরও কাছাকাছি, Juno উপগ্রহটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে ঘন্টায় প্রায় ৮৮০০ মাইল বেগে গতি ত্বরণ লাভ করে।
OSIRIS-REx এর পৃথিবীর সাথে সাক্ষাৎ
Juno যখন তার গুলতির সময় পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৪৭ মাইলের মধ্যে আসে, OSIRIS-REx একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে, তার সবচেye কাছের বিন্দু অ্যান্টার্কটিকার উপর থেকে প্রায় ১১০০০ মাইল দূরে। উপগ্রহের দল অনলাইন থেকে এমন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করছে যাদেরা এই দর্শনীয় ঘটনার সাক্ষী ছিলেন।
গুলতির তাৎপর্য
গুলতির কৌশল OSIRIS-REx এর মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জ্বালানি সংরক্ষণ করে, যা মহাকাশযানকে আরও বেশি দক্ষতার সাথে বেনুর দিকে তার যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করে। আগামী বছরে, OSIRIS-REx গ্রহাণুটি নিয়ে গবেষণা চালাবে, তার পৃষ্ঠের ধুলোকে অস্থির করার জন্য একটা গ্যাসের প্রবাহ ব্যবহার করবে এবং ২০২৩ সালে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য নমুনা সংগ্রহ করবে। এই নমুনাগুলোর মধ্যে জীবনের উৎস এবং আমাদের সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে গোপনীয়তা উন্মোচনের সম্ভাবনা রয়েছে।