সেরাটোপসিয়ানরা: এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত দ্বীপে চলাচলকারী ডাইনোসর
ক্রিটেসিয়াস যুগের উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার শিংওয়ালা ডাইনোসর
সেরাটোপসিয়ানরা ছিল শিংওয়ালা ডাইনোসরের বিখ্যাত একটি প্রজাতি, যারা ক্রিটেসিয়াস যুগে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত। এই শাকাহারী প্রজাতিটির মুখের অস্বাভাবিক গড়ন, শিং এবং হাড়ের ঘাড় এদের অন্য সকল প্রজাতি থেকে আলাদা করে। একটা সময় মনে করা হত যে সেরাটোপসিয়ানরা শুধু উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়াতেই পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলি দেখাচ্ছে যে এই রোমাঞ্চকর প্রাণীরা ইউরোপেও পৌঁছেছিল।
আজকাসেরাটপস: হাঙ্গেরি থেকে আবিষ্কৃত নতুন সেরাটোপসিয়ান
২০১০ সালে, জীবাশ্মবিদ্যাবিদ আতিলা ওসি, রিচার্ড বাটলার এবং ডেভিড ওয়াশাম্পেল হাঙ্গেরি থেকে নতুন এক প্রজাতির সেরাটোপসিয়ানের আবিষ্কার ঘোষণা করেন। এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয় আজকাসেরাটপস কোজমাই। মাথার খুলি এবং চোয়ালের কিছু অংশ দিয়ে চিহ্নিত এই ছোট ডাইনোসরটি উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার এর সহগোত্রীদের থেকে আকারে অনেক ছোট ছিল। এর লম্বা ভ্রু এবং বড় আকারের হাড়ের ঘাড় ছিল না। দেখতে এটি মঙ্গোলিয়ায় পাওয়া বাগাসেরাটপস এবং ম্যাগ্নিরোস্ট্রিস প্রজাতির সেরাটোপসিয়ানদের মত।
জীবাশ্মবিদ্যা এবং দ্বীপে চলাচল
ইউরোপে আজকাসেরাটপস আবিষ্কারের ফলে একটি প্রশ্ন উঠেছে: এই শিংওয়ালা ডাইনোসরটি এত দূরে পশ্চিমে কিভাবে পৌঁছল? ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ দিকে ইউরোপের বেশিরভাগ অংশই সমুদ্রে ডুবে ছিল। এ থেকে ধারণা করা যায়, আজকাসেরাটপস একটি দ্বীপে বাস করত। অনুরূপ অন্যান্য ডাইনোসরের তুলনায় এর শরীরের আকার ছোট হওয়ায় মনে করা হচ্ছে এরা হয়ত বামন প্রজাতির ছিল। তবে এই গবেষণাকে সমর্থন করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন, আজকাসেরাটপসের পূর্বপুরুষেরা (বা হয়ত আজকাসেরাটপস নিজেরাই) এশিয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে দ্বীপে দ্বীপে চলাচল করে ইউরোপে পৌঁছেছে। এই তত্ত্বটি এশিয়ায় আজকাসেরাটপসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের (যেমন বাগাসেরাটপস এবং ম্যাগ্নিরোস্ট্রিস) উপস্থিতি দ্বারা সমর্থন করা হয়েছে।
বিবর্তনীয় সম্পর্ক এবং জটিলতা
ইউরোপে আজকাসেরাটপসের উপস্থিতি সেরাটোপসিয়ানদের বিবর্তন এবং ছড়িয়ে পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেنج করে। এই আবিষ্কারটি ইঙ্গিত দেয় যে এই ডাইনোসররা পূর্বের ধারণার চেয়ে আরও বেশি বিস্তৃত এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যোগ্য ছিল। এছাড়াও, এই আবিষ্কার জীবাশ্মবিদ্যা, জীববিজ্ঞান এবং বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা জটিল যোগাযোগকেও তুলে ধরে। এই বিষয়গুলিই ক্রিটেসিয়াস যুগে ডাইনোসরদের বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করে।
আরও গবেষণা এবং তাৎপর্য
আজকাসেরাটপসের আবিষ্কার সেরাটোপসিয়ানদের জীবাশ্মবিদ্যা, বিবর্তনীয় সম্পর্ক এবং বিস্তারের ধরণ নিয়ে গবেষণার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এই দ্বীপে চলাচলের হাইপোথিসিসকে সমর্থন করার জন্য, আজকাসেরাটপসের সম্ভাব্য বামনবাদের তদন্ত করার জন্য এবং ইউরোপে সেরাটোপসিয়ানদের বৈচিত্র্যের আরও বিস্তৃত প্রভাবগুলি অনুসন্ধান করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এই আবিষ্কারটি শুধুমাত্র সেরাটোপসিয়ানদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকেই সম্প্রসারিত করে না, পাশাপাশি এটি ক্রিটেসিয়াস যুগে ডাইনোসরদের বিবর্তন এবং ছড়িয়ে পড়ার জটিল এবং গতিশীল প্রকৃতির দিকেও দৃষ্টি দেয়।