Home বিজ্ঞানজীবন বিজ্ঞান হট জোন: প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়ঙ্কর বিশ্ব উন্মোচন

হট জোন: প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়ঙ্কর বিশ্ব উন্মোচন

by রোজা

হট জোন: প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়ঙ্কর বিশ্ব উন্মোচন

ভাইরাসের প্রকৃতি

ভাইরাস হল রহস্যজনক এবং প্রাণঘাতী উপাদান যা শতাব্দী ধরে মানবতাকে আক্রান্ত করে আসছে। এরা জীবন্ত জীব নয়, বরং একটি প্রোটিন আবরণ দ্বারা ঘেরা জেনেটিক উপাদানের (আরএনএ বা ডিএনএ) ক্ষুদ্র কণা। তাদের সরলতার পরেও ভাইরাস মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের মধ্যে ধ্বংসাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।

মারবার্গ এবং ইবোলা ভাইরাস, যা “থ্রেড ভাইরাস” নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত, মানবজাতির কাছে পরিচিত সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ভাইরাসগুলি অত্যন্ত সংক্রামক এবং এটি গুরুতর রক্তক্ষরণকারী জ্বর সৃষ্টি করতে পারে, যা অঙ্গ বিকল এবং মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

ঐতিহাসিক প্রাদুর্ভাব

প্রথম পরিচিত মারবার্গ প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল ১৯৬৭ সালে জার্মানিতে। সাতজন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যা ভ্যাকসিন উৎপাদনে ব্যবহৃত আফ্রিকান সবুজ বানরের কারণে ঘটেছিল।

ইবোলা ভাইরাসটি প্রথমবারের মতো সুদানে ১৯৭৬ সালে দেখা দেয়, যা তার অর্ধেক শিকারকে হত্যা করে। দুই মাস পরে, ইবোলার একটি আরও প্রাণঘাতী স্ট্রেন জায়ারে আঘাত হানে, ৩০০ জনেরও বেশি লোককে সংক্রামিত করে এবং তাদের ৯০% কে হত্যা করে।

রেস্টন প্রাদুর্ভাব

১৯৮৯ সালে ইবোলা ভাইরাসটি আবার আঘাত হানে, এবার ভার্জিনিয়ার রেস্টনের একটি শহরতলির মলে থাকা আফ্রিকান বানরদের একটি উপনিবেশে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধ করার জন্য এবং প্রাদুর্ভাবটিকে সীমাবদ্ধ করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছিল।

সেনাবাহিনীর তদন্তে দেখা গেছে যে ইবোলার রেস্টন স্ট্রেনটি জায়ার স্ট্রেনের মতো মানুষের জন্য মারাত্মক ছিল না। যাইহোক, এটি এখনও অত্যন্ত সংক্রামক ছিল এবং একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করেছিল।

বিজ্ঞানের ভূমিকা

মার্কিন সেনাবাহিনীর মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ ইনফেকশাস ডিজিজের (ইউএসএএমআরআইআইডি) বিজ্ঞানীরা ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসা শনাক্ত করতে এবং তা বিকাশ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা আবিষ্কার করেছেন যে ভাইরাসটি সংক্রামিত শারীরিক তরল বা দূষিত পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে।

গবেষকরা আরও জানতে পেরেছেন যে ইবোলা ভাইরাস দ্রুত মিউটেট হতে পারে, যার ফলে কার্যকর টিকা এবং চিকিৎসা বিকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

পরিবেশগত সংযোগ

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে ইবোলা এবং মারবার্গের মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের আবির্ভাব মানুষের বনাঞ্চল দখলের সাথে যুক্ত। এই ভাইরাসগুলি এমন বাদুড় এবং অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে বাস করতে পারে বলে মনে করা হয় যারা এই বাস্তুতন্ত্রে বাস করে।

যখন মানুষ কৃষিকাজ বা উন্নয়নের জন্য বনাঞ্চল কেটে ফেলে তখন তারা এই প্রাণীদের আরও নিকটে চলে আসে, যার ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

ভাইরাল প্রাদুর্ভাবের ভবিষ্যৎ

ভবিষ্যতে ভাইরাল প্রাদুর্ভাবের হুমকি বিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় এবং বিশ্বায়ন এমন কিছু কারণ যা নতুন এবং আরও প্রাণঘাতী ভাইরাসের উদ্ভব ঘটাতে পারে।

গবেষকরা ভাইরাল রোগের জন্য নতুন টিকা এবং চিকিৎসা বিকাশের জন্য কাজ করছেন। তারা বাস্তুতন্ত্রে ভাইরাসের ভূমিকাও অধ্যয়ন করছেন এবং ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাব রোধের উপায়গুলি অন্বেষণ করছেন।

নৈতিক বিবেচনা

রেস্টন ইবোলা প্রাদুর্ভাবের সময়, সেনাবাহিনী এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যা কেউ কেউ অনৈতিক বলে মনে করেছিল, যেমন আইন উপেক্ষা করা এবং প্রেসকে ধোঁকা দেওয়া। এই সিদ্ধান্তগুলি ভাইরাসটিকে সীমাবদ্ধ করার এবং ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য নেওয়া হয়েছিল।

যাইহোক, তারা জনস্বাস্থ্য সংকটকালে জননিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে।

উপসংহার

ভাইরাস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি ধ্রুবক হুমকি। এরা জটিল এবং প্রাণঘাতী উপাদান যা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে এবং মিউটেট হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসগুলিকে বুঝতে এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলিকে প্রতিরোধ ও চিকিৎসার উপায় খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছেন।

You may also like