Home জীবনসমাজ ও সংস্কৃতি থাইল্যান্ডের রাজদ্রোহ আইন এবং সূলক সিভারাক্সার মামলা: মত প্রকাশের স্বাধীনতার লড়াই

থাইল্যান্ডের রাজদ্রোহ আইন এবং সূলক সিভারাক্সার মামলা: মত প্রকাশের স্বাধীনতার লড়াই

by জুজানা

## থাইল্যান্ডের রাজদ্রোহ আইন এবং সূলক সিভারাকসার মামলা

## ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৫৯৩ সালে, থাইল্যান্ডের (তৎকালীন সিয়াম) রাজা নরেসুয়ানের হাতিপৃষ্ঠে বার্মার যুবরাজের সঙ্গে একটি নাটকীয় যুদ্ধে জয়লাভের কথা বলা হয়ে থাকে। থাই সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর কাছে, এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুক্তির গল্প হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইতিহাসবিদ সূলক সিভারাক্সা এই কিংবদন্তিযুক্ত দ্বন্দ্বের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন যে রাজা নরেসুয়ান সত্যিই বার্মিজ যুবরাজকে হত্যা করেছিলেন কিনা।

## রাজদ্রোহের অভিযোগ

২০১৪ সালে, সিভারাকসার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়, থাইল্যান্ডের একটি বিতর্কিত আইন যা রাজপরিবারকে অপমান বা অপদস্থ করাকে নিষিদ্ধ করে। এই অভিযোগের সূত্রপাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতা যেখানে সিভারাক্সা প্রচারণার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন এবং রাজা নরেসুয়ানের অভিযানের ঐতিহাসিক বর্ণনার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

## মামলার তাৎপর্য

সিভারাক্সার বিরুদ্ধে মামলাটি সামরিক শাসনের অধীনে থাইল্যান্ডে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমনের দিকটি তুলে ধরে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই বিরোধী দলের সদস্য এবং মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ বেড়েছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত ৯৪ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং ৪৩ জনকে রাজদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

## সূলক সিভারাক্সা: একটি প্রোফাইল

সূলক সিভারাক্সা একজন বিশিষ্ট সামাজিক ন্যায়বিচার সংস্কারক যাকে দু’বার থাইল্যান্ড থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে, চারবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং একাধিকবার রাজতন্ত্রকে অপমান করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তিনি ধারাবাহিকভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে এসেছেন।

## বিচার এবং খালাস

সিভারাক্সার বিচার দুই বছর ধরে চলে, কিন্তু অবশেষে প্রমাণের অভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় अभियोजকরা। সিভারাক্সা তার মুক্তির জন্য থাইল্যান্ডের নতুন রাজা মহা বাজিরালংকর্নের প্রশংসা করেছেন। বিচারের সময় তিনি তার নির্দোষতা বজায় রেখেছিলেন এবং খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

## মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর প্রভাব

সূলক সিভারাক্সার খালাস থাইল্যান্ডে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। এটি প্রমাণ করে যে এমনকি একটি দমনকারী সামরিক শাসনের অধীনেও স্ট্যাটাস কো’কে চ্যালেঞ্জ করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা সম্ভব।

## ঐতিহাসিক সন্দেহ এবং সত্যের গুরুত্ব

সিভারাক্সার মামলা রাজা নরেসুয়ানের গল্পের ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। যদিও কিংবদন্তির গভীর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে, ঐতিহাসিক বিবরণগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা করা এবং যেকোনো সম্ভাব্য বিকৃতি বা ভুল ত্রুটি চ্যালেঞ্জ করা জরুরি।

## রাজতন্ত্রের ভূমিকা

থাইল্যান্ডের রাজদ্রোহ আইন কার্যকরীভাবে কেবল জীবিত রাজা, রানী এবং উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে অতীতে এই আইনকে শিথিলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এবং সমালোচকরা যুক্তি দেন যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করতে এবং বিরোধী মতকে দমন করতে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।

## রাজদ্রোহ আইনের বিবর্তন

থাইল্যান্ডে রাজদ্রোহ আইনটি সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে, যা পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে। আইনের ঐতিহাসিক বিকাশ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এর প্রভাবগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

## উপসংহার

সূলক সিভারাক্সার মামলা এবং থাইল্যান্ডে রাজদ্রোহের বিষয়টি ইতিহাস, রাজনীতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে জটিল সম্পর্কটিকে তুলে ধরে। যদিও সাংস্কৃতিক বর্ণনাগুলি শক্তিশালী হতে পারে, সেগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা করা এবং এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে সেগুলি বিরোধী মতকে চুপ করানোর বা সত্যকে দমন করার হাতিয়ার হয়ে উঠবে না। সিভারাক্সার খালাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই একটি চলমান সংগ্রাম, এমনকি বিরূপ অবস্থার মুখেও।

You may also like