বিশ্বে ক্ষুধা তৃতীয় বছরের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে
ক্ষুধা বৃদ্ধির কারণসমূহ
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং অন্যান্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, টানা তৃতীয় বছর বিশ্বে ক্ষুধা বৃদ্ধি পেয়েছে, এর ফলে গোটা বিশ্বে ৮২০.৮ মিলিয়ন মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। অগ্রগতির এই উদ্বেগজনক পশ্চাদপসরণ মূলত দুটি প্রধান কারণের জন্য ঘটেছে:
- সংঘাত: ইয়েমেন, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং সোমালিয়ার মতো দেশগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কারণে খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ ব্যাহত হয়েছে, ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও ভেনেজুয়েলায় কাঁচা তেলের দাম কমে যাওয়া போன்ற অর্থনৈতিক সংকটও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
- জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি ও বন্যা সহ চরম আবহাওয়া ঘটনা বিশ্বের অনেক অংশে কৃষিকে ধ্বংস করেছে, বিশেষ করে আফ্রিকায়। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল, পশ্চিম আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে খাদ্য সরবরাহ এবং জীবিকা নির্বাহে প্রভাব পড়েছে।
ক্ষুধার পরিণতি
ক্ষুধার ব্যক্তি ও সমাজের জন্য মারাত্মক পরিণতি রয়েছে:
- শিশুদের অপুষ্টি: ৫ বছরের কম বয়সী ১৫১ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টির কারণে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে ৫০.৫ মিলিয়ন শিশু অপচয়জনিত কারণে ভুগছে, অর্থাৎ মারাত্মকভাবে ওজন কম।
- স্থূলতার বিদ্রুপাত্মক দিক: ক্ষুধার কারণে স্থূলতার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সেইসব দেশে যেখানে সতেজ খাবারের দাম বেশি। মানুষ অতিরিক্ত চর্বি এবং চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটায় এবং ওজন বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
- স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব: অপুষ্টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে, ফলে রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ে। “পর্যাপ্ত খাওয়া বা না খাওয়া” জাতীয় খাদ্যাভ্যাসের ফলে সৃষ্ট স্থূলতা ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্ব ক্ষুধা মোকাবেলা
ক্ষুধার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা মোকাবেলা করতে, প্রতিবেদনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে:
- সংঘাত বন্ধ করা: ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান সংঘাতের সমাধান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- জলবায়ু পরিবর্তন কমানো: গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো এবং জলবায়ু খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা চরম আবহাওয়া ঘটনা রোধ করতে এবং খাদ্য উৎপাদন রক্ষায় সহায়তা করতে পারে।
- স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলা: বন্যা ও অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে দেশগুলোর স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করলে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর এগুলোর প্রভাব কমানো যায়।
- দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস করা: দারিদ্র্য এবং আয়ের বৈষম্য, যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় অবদান রাখে, সেগুলো মোকাবেলা করা টেকসই সমাধানের জন্য অপরিহার্য।
- টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা: টেকসই কৃষি পদ্ধতি এবং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাকে উন্নীত করা বিশেষ করে দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং সাশ্রয়ী মূল্য বাড়াতে পারে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
বিশ্ব ক্ষুধা নির্মূল করা একটি জটিল চ্যালেঞ্জ যার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়েছে, ফলে স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা জালের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা নির্মূল এবং পুষ্টি উন্নতকরণের লক্ষ্যে তাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২ অর্জন করতে ব্যর্থ হবে। প্রতিবেদনের লেখকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে “কেউ পিছিয়ে না থাকে” তা নিশ্চিত করার জন্য “উল্লেখযোগ্য পরিশ্রম” প্রয়োজন।