চীনে আই ওয়েই ওয়ের বেইজিং ষ্টুডিও ভেঙে দেওয়া: শিল্পী দমনের প্রতীক
পটভূমি: আই ওয়েইওয়ে এবং তার বিতর্কিত শিল্প
চীনের এক বিখ্যাত সমসাময়িক শিল্পী আই ওয়েইওয়ে তার সমালোচনামূলক এবং উস্কানিমূলক শিল্পকর্মের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। তার কাজ প্রায়শই মানবাধিকার, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং সামাজিক ন্যায়ের থিমগুলি অন্বেষণ করে। আই ওয়েইওয়ের শিল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং সারা বিশ্বের অনেক বড় মিউজিয়াম এবং গ্যালারিতে তার কাজ প্রদর্শিত হয়েছে।
“পরীকথা”র জন্ম
২০০৭ সালে আই ওয়েইওয়ে বেইজিংয়ের বামান দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প জেলার একটি প্রাক্তন কারখানাকে একটি স্টুডিওতে রূপান্তর করেছিলেন, যেখানে তিনি তার কিছু সবচেয়ে আইকনিক কাজ, যেমন “ফেয়ারিটেল” এবং “ফাউন্টেন অফ লাইট” পরিকল্পনা করে তৈরি করেন। “ফেয়ারিটেল” ছিল ১০০১টি কিং রাজবংশের চেয়ারের একটি ইনস্টলেশন, যা সেই ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল যারা আই ওয়েইওয়ের সঙ্গে জার্মানির ডকুমেন্টা ১২-এ ভ্রমণ করেছিল, যা একটি মর্যাদাপূর্ণ শিল্প প্রদর্শনী।
ভেঙে দেওয়া স্টুডিও
২০১৮ সালের ৬ই আগস্ট আই ওয়েইওয়ের বেইজিং স্টুডিওকে আকস্মিকভাবে কর্তৃপক্ষ ভেঙে দেয়। শিল্পী ইনস্টাগ্রামে এই ধ্বংসের ঘটনাকে ডকুমেন্ট করে একটি সিরিজ ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে দেখা গিয়েছিল, শ্রমিকরা ভবন ভেঙে ফেলতে ভারী যন্ত্র ব্যবহার করছে।
আই ওয়েইওয়ের প্রতিক্রিয়া
আই ওয়েইওয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তার হতাশা এবং প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, ভাঙনটি হচ্ছে “চীনে স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে ধ্বংস করার এবং মতবিরোধের ইতিহাস মুছে ফেলার একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ”। তিনি নিজের স্টুডিও হারানোর ঘটনাকে “গভীর এবং বিস্তৃত ধ্বংস” হিসাবে তুলনা করেছেন এমন একটি সমাজের, যেখানে মানবাধিকারকে সম্মান করা হয় না।
ধ্বংসের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
যদিও সরকার দাবি করেছে যে ভাঙনটি পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনার অংশ ছিল, অনেকে বিশ্বাস করেন যে এটি রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ছিল। আই ওয়েইওয়ে চীনা সরকারের একজন কণ্ঠ্যালো সমালোচক এবং তার শিল্প প্রায়ই তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। ২০১১ সালে তাকে ৮১ দিনের জন্য কর ফাঁকির অভিযোগে আটক করা হয়েছিল, যা অনেকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে দেখেছিল।
চীনে শিল্প স্বাধীনতার ওপর প্রভাব
আই ওয়েইওয়ের স্টুডিও ভেঙে দেওয়ার ঘটনা চীনে শিল্প স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সরকার স্বাধীন শিল্পকলা স্থানগুলিকে দমন করেছে এবং সেন্সর করেছে সেইসব প্রদর্শনীকে, যেগুলি তার সরকারি বর্ণনাকে চ্যালেঞ্জ করে। আই ওয়েইওয়ের স্টুডিও ধ্বংস করা হয়েছে, তাকে ভয় দেখানোর প্রতীক হিসাবে এবং অন্য শিল্পীদের সতর্ক করা হয়েছে, যারা হয়তো মতবিরোধ প্রকাশ করতে সাহস দেখাতে পারেন।
জেন্ট্রিফিকেশন এবং পরিবর্তিত শিল্প জেলা
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াও আই ওয়েইওয়ের স্টুডিও ভেঙে দেওয়া বেইজিংয়ের বামান দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প জেলায় চলমান জেন্ট্রিফিকেশনের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এলাকাটি উন্নয়নের একটি ঢল দেখেছে, যেখানে অনেক নিম্ন-ভাড়ার শিল্পী স্টুডিওকে বাণিজ্যিক ভবন এবং শপিং মল দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আই ওয়েইওয়ের উত্তরাধিকার এবং চীনে শিল্পকলার ভবিষ্যৎ
তার স্টুডিও ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও আই ওয়েইওয়ে সমসাময়িক শিল্পকলায় একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসাবে রয়ে গেছেন। তার কাজ সারা বিশ্বের দর্শকদের অনুপ্রাণিত এবং চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকবে এবং শিল্পী স্বাধীনতার এক নির্ভীক সমর্থক হিসাবে তার উত্তরাধিকার টিকে থাকবে।
আই ওয়েইওয়ের স্টুডিও ভেঙে দেওয়া চীনে শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যে চলমান সংগ্রামের একটি স্মারক হিসাবে কাজ করে। যখন দেশটি সেন্সরশিপ এবং দমনের সমস্যার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শিল্পকলা এবং শিল্পী স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেছে।