ব্রাজিল সরকারি ভবনগুলোতে দাঙ্গাকারীরা শিল্পকর্মগুলোতে ক্ষতি করেছে
ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য
8ই জানুয়ারি ব্রাজিলের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাইর বোলসোনারোর সমর্থকরা ব্রাসিলিয়ার সরকারি ভবনগুলোতে অভিযান চালায় এবং রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ, কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে অবস্থিত শিল্পকর্মগুলোতে যথেষ্ট ক্ষতি করে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য এখনো একটি দল কাজ করে চলেছে, তবে কয়েকটি শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেগুলো আর মেরামত করা যাবে না।
বিখ্যাত আধুনিকতাবাদী স্থপতি অস্কার নিমেইর দ্বারা নকশা করা এই ভবনগুলো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এবং এখানে বিশাল সংগ্রহে ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পকর্ম রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মতে, ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকর্মগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা যাচ্ছে না কারণ সেগুলোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য অপরিসীম।
ক্ষতিগ্রস্থ প্রতীকী শিল্পকর্ম
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে একটি হলো বালথাজার মার্টিনোট কর্তৃক নির্মিত ১৭শ শতাব্দীর একটি ঘড়ি, যা পর্তুগালের ডম জোয়াও ষষ্ঠ কে উপহার দেওয়া হয়েছিল। এটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর শুধুমাত্র মিল রয়েছে ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে।
এমিলিয়ানো ডি কাভালকান্তির আরেকটি প্রতীকী শিল্পকর্ম “আস মুলাতাস”কে সাতটি জায়গায় ছিদ্র করা হয়েছে। এই আধুনিকতাবাদী傑作টির মূল্য 1.5 মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং এটি ম্যাটিস এবং পিকাসোর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে শিল্পীর অনন্য ব্রাজিলিয়ান স্টাইলকে প্রতিফলিত করে।
জর্জে এডুয়ার্ডোর আঁকা ভাস্কর্য “ব্যান্ডেইরা দু ব্রাজিল”কে দাঙ্গাকারীরা ফায়ার হাইড্র্যান্ট খুলে পানি ছড়িয়ে দিয়ে মাটিতে ভাসতে দেখা যায়। ব্রুনো জিওর্জির ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য “ও ফ্লাউটিস্টা” এবং ফ্রান্স ক্রাজকবার্গের একটি কাঠের দেয়ালের ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং টুকরো টুকরো করে হলঘরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই দাঙ্গাটি বিতর্কিত তত্ত্ব এবং সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বোলসোনারো এই ঘটনার জন্য দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন, তবে হামলার সাথে জড়িত হিসেবে ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে 6ই জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হওয়া হামলার সাথে তুলনা করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা একটি জরুরি বিষয়, এবং ব্রাজিল সরকারের ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধার করা এবং তাদের শৈল্পিক ঐতিহ্য রক্ষা করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং ব্রাজিলের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব
পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে, তবে ক্ষতির পরিমাণ এবং কিছু শিল্পকর্ম মেরামতের সম্ভাব্যতা এখনো অনিশ্চিত। এই শিল্পকর্মগুলোর ক্ষতি ব্রাজিলের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জন্য একটি বিশাল ক্ষতি।
এই দাঙ্গা ব্রাজিলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং সুনামকেও কলঙ্কিত করেছে, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির উপর একটি দাগ ফেলেছে। ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধার এবং হামলার জন্য দায়ীদের বিচার করা হবে ব্রাজিলের সুনাম পুনরুদ্ধার এবং তাদের সহনশীলতার প্রদর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।